Altcoins Talks - Cryptocurrency Forum

Local => বাংলা (Bengali) => Topic started by: Salauddin on September 07, 2018, 04:49:46 PM

Title: ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং এর ইতিহাস
Post by: Salauddin on September 07, 2018, 04:49:46 PM
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল এক রকমের ডিজিটাল কারেন্সি। এই কারেন্সি কোন সরকার বা রাষ্ট্র উৎপাদন বা জোগান দেয় না। এসব বিভিন্ন র্ডওয়্যারের এর মাধ্যমে ইন্টারনেট এ যুক্ত থেকে মাইনিং করতে হয়। আর এই মাইনিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিল সব এলগোরিদম, ব্লক এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি সম্পন্ন করেই একেকটি কয়েন বানাতে হয়। ব্লকচেইন এলগোরিদম এর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একটি কয়েন জেনারেট হতে প্রথম দিকে টাইম খুব কম ( মনে করুন ৫ মিনিট) লাগলেও সময়ের সাথে সাথে এর ডিফিকাল্টি বাড়তে থাকে। এতে করে এক সময় দেখা যায় একটি কয়েন জেনারেট হতে টাইম নেয় ১৫ দিনের বা ৩০ দিনেরও বেশি সময়। আর এই ডিফিকাল্টি এর সাথেই পাল্লা দিয়ে বাড়ে কয়েন রেট।
উদাহরনঃ Bitcoin, OneCoin, Litecoin, Ripple, Dogecoin ইত্যাদি।

সাধারন কারেন্সির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই যেমন টাকা, রুপি, ইউরো, ডলার, পাউন্ড ইত্যাদি। এই সব মুদ্রা দেশ ভেদে একেক রকম হয়। এদের উৎপাদন এবং নিয়ন্ত্রন ও সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে। এই মুদ্রার সরবরাহ ইচ্ছেমত বাড়াতে কমাতে পারে। কিন্তু প্রতিটি ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি নির্দিস্ট পরিমান কয়েন এর বেশি জেনারেট করতে পারবে না। উদাহরন স্বরূপ Onecoin সর্বোচ্চ ২.১ বিলিয়ন কয়েন জেনারেট করতে পারবে।

নিম্নের কয়েকটি লিঙ্কের মাধ্যমে দেখে নিতে পারেন ক্রিপ্টোকারেন্সি এর আরো বিস্তারিতঃ
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিউজ এর মতে
উইকিপিডিয়া মতে
ক্রিপ্টোকারেন্সি এর বর্তমান এক্সচেঞ্জ দর জানতে এই লিঙ্ক এ দেখুন বাজার দর

আমাদের সাধারন মুদ্রা টাকা, ডলার এর মান যেমন এক নয় এবং মান স্থির থাকে না তেমনি সব ক্রিপ্টোকারেন্সি এর মান এক নয় এবং মান স্থির থাকে না। যতটুকু জানা যায় Bitcoin যখন মার্কেটে আসল তখন তার প্রারম্ভিক দর ছিল .১০$ এর মত।


একটি মজার একই সাথে দুঃখের ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করছিঃ
মে, ২০১০ শালে লাজলো হেইঞ্জ নামের এক জন তার কাছে থাকা ১০,০০০ বিট কয়েন দিয়ে ২ টি পিঁজা কিনেছিল। বিট কয়েনের সর্ব প্রথম কোন পণ্য ক্রয় ছিল এটাই প্রথম। বিট কয়েনের ভবিষ্যৎ তিনি বুঝতে পারেন নাই। এর মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই প্রতিটি বিট কয়েন এর দাম দাড়ায় প্রায় ১২০০ USD।
যদি ১ btc= 500$ ধরি তাহলে ২ টি পিঁজার মুল্য দাড়ায় 50,00,0,00 $ !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

আফসোস সেই লাজলোর জন্যে যিনি মিলিওনিয়ার হতে পারতেন তিনি দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে কিছুই হতে পারলেন না। ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আলোচনার আগে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সচরাচর ব্যবহৃত মুদ্রাব্যবস্থা নিয়ে একটু জেনে নেয়া যাকঃ

বহু বছর আগে থেকেই মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী জিনিসপত্র লেনদেন করে আসছে। লেনদেনের সবচেয়ে প্রাচীন এবং অধিক প্রচলিত প্রথার মধ্যে অন্যতম ছিলো বিনিময় প্রথা। কিন্তু মানদন্ডের বিচারে সেখানে বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছেন। ধরা যাক, ফল ব্যবসায়ী শফিক সাহেবের একবস্তা চাল লাগবে এবং বিনিময়ে তাকে এক বস্তা তুলা দিতে হবে। কিন্তু শফিক সাহেবের কাছে কোন তুলা নেই। যেহেতু শফিক সাহেবের কাছে কোন তুলা নেই, তাহলে এখানে বিনিময় কার্য সম্পন্ন হতে পারছেনা।

বিনিময় প্রথার এই সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়ার লক্ষ্যে সবাই এমন একটা প্রথা উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলো, যেখানে সব ধরণের পণ্যের একটা আদর্শ মূল্য থাকবে। উদাহরণ হিসেবে গোল্ডের কথা বলা যেতে পারে। অনেক বছর আগে থেকে এখনো গোল্ডকে সম্পদ পরিমাপের একটা একক হিসাবে ধরা হত। আগে সরাসরি গোল্ড লেনদেন হত, সেটা একসময় মানুষের প্রয়োজনমত কাগজের মুদ্রা ব্যাবস্থায় রূপ নেয়।

এভাবে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রা যেমন, টাকা, ডলার, পাউণ্ড, ইউরো ইত্যাদি এসেছে। দেশের অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই মুদ্রা ছেপে বাজারে ছাড়তে পারে মানুষের ব্যবহারের জন্য। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন বা সম্পদ আদান প্রদান সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো দেশের আইন অনুযায়ী সামলানোর জন্য তৈরি হয়েছে ব্যাংক বা ব্যাংকিং সিস্টেম। কিন্তু এতে করেও সমস্যার সমাধান হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে বড় বড় ব্যাংক ডাকাতির ভয়াবহ গল্পগুলো শুনলে কার না হৃদয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়! তবুও সময় বয়ে যায়, আর মানুষ ও দমে যাবার পাত্র নয়। নিজের প্রয়োজনে তারা আবিষ্কার করে একের পর এক বিস্ময়। আজকে আমরা তেমনি এক বিস্ময়ের কথা বলবো।


বর্তমানে প্রচলিত নানান মূদ্রা
মূল আলোচনায় যাবার আগে আমরা একটা কাল্পনিক দৃশ্যপট কল্পনা করার চেষ্টা করবো।

খুব ছোটবেলা থেকে আপনার অনেক ধরণের শখ আছে। এর মধ্যে অন্যতম শখ হচ্ছে আর্ট এন্ড কালচার। অর্থাৎ এই আধুনিকায়ন সভ্যতায় বসে আপনার দুষ্প্রাপ্য চিত্রকর্মের প্রতি বিশেষ আগ্রহ আছে। খুব ছোটবেলা থেকে সংগ্রহ করছেন। তাই নিজের এত বছরে সংগ্রহ করা চিত্রকর্ম নিয়ে আপনার ছোটখাটো একটা মিউজিয়াম আছে। কথায় আছে শখের তোলা ৮০, এর জন্য মূল্য ও দিতে হয় অনেক। এসব জিনিস সংগ্রহ করা এবং নিজের সংগ্রহে রাখা দুইটারই ঝামেলা অনেক। কারন এসবের উপর নানা ধরনের লোকজনের নজর থাকে, অনেক সময় এগুলো নিয়ে বড় ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধ কিংবা দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রায় শেষের দিকে অথবা চাকরি নিয়ে বেশ ব্যস্ত কিংবা এখন আর আগের মতো পেইন নিতে চান না, আবার শখের জিনিষ ছাড়তে ও চান না। তাই বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছেন এমন কোন উপায় নিয়ে যা দিয়ে সংগ্রহের সকল আর্টগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করা যায় যেন,

প্রথমেই পণ্যের গুণগত মান নিশ্চায়ন করা।
আর্থিক লেনদেন এবং আইনগত ব্যাপারগুলো বাড়িতে বসে, বিনা ঝামেলায়, নীরবে এবং স্বল্পতম সময়ে করে ফেলা।
বিক্রয় করার সময় একটি স্বচ্ছ লেনদেন প্রক্রিয়া।
পণ্যের কঠোর নিরাপত্তা।
অর্থাৎ যদি কোন চোর কোনক্রমে আপনার কোন আর্ট চুরি করে বাইরে বিক্রি করতে যায়, তাহলে যেন সে চোরাই জিনিস বিক্রির দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে এবং চোর যদি পালিয়েও যায়, যে সেটা কিনেছে সে ধরা পড়ে চোরাই জিনিস কেনার অপরাধে।

বিনিময় প্রথা তো আর আপনার এই চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু ব্যাংকিং ব্যবস্থা চাইলেই আপনার এই সমস্যা দূর করতে পারে। কিন্তু ঐ যে বললাম বড় বড় ব্যাংক ডাকাতির করুণ ইতিহাসের কথা। অন্যদিকে আপনি যে ধরণের আর্থিক নিরাপত্তা ও ব্যাংকগুলো এই মুহূর্তে দিতে পারছে না।

আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি সেই সাপেক্ষে ব্যাংকের ভূমিকা একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করি।

আপাতত আমরা এখানে ব্যাংকের গুরুত্ব বুঝানোর চেষ্টা করি। ধরে নিচ্ছি, আপনি আপনার চিত্রকলা সম্পর্কিত কোন কাজের জন্য মিসরের কোন এক পত্নতাত্ত্বিক ব্যবসায়ীর কাছে টাকা পাঠাবেন। তো আপনি জানেন কিংবা শুনেছেন যে প্রায় সময় তারা টাকা নিয়ে অনেক ধরণের অনৈতিক পথের আশ্রয় নেয়। তাই আপনি তাদের টাকা দিতে ঠিক ভরসা পাচ্ছেন না। যদি টাকা নিয়ে সে ব্যবসায়ী অস্বীকার করে! সুতরাং এক্ষেত্রে আপনার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান লাগবে যেখানে আপনি স্বাচ্ছন্দে টাকা আদান-প্রদান করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার অ্যাকাউন্টের টাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মিসরের সেই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে যাবে, এবং প্রতিষ্ঠানটি সেই লেনদেনের রেকর্ড রাখবে যাতে এই লেনদেন নিয়ে দুইজনের কেউ কোন প্রশ্ন না তুলতে পারে। এই মাঝখানের প্রতিষ্ঠানটি হল ব্যাংক।

কেমন হতো যদি আপনি তৃতীয় কোন পক্ষ কিংবা ব্যাংকের আশ্রয় না নিয়ে কোন উপায়ে মিসরের সেই ব্যবসায়ীকে টাকা দিতে পারতেন? এখানে আমরা মূলত একটি প্রসেস নিয়ে চিন্তা করছি যা একটি ব্যাংকের চাইতে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কোন অর্থ লেনদেন নিশ্চিত করবে। এমনকি সেই সিস্টেমে থাকবে না হ্যাংকি কিংবা কোন ধরণের লুটপাটের সম্ভাবনা।

আসলে এই প্রযুক্তির নাম হল ব্লকচেইন, যাকে বর্তমানে বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তিবিদ ভবিষ্যতের ব্যাংকিং টেকনোলজি হিসাবে দেখছেন এবং কিছু প্রভাবশালী দেশের কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে এই প্রযুক্তির পেছনে। ব্লকচেইন সিস্টেম এবং সেটার জন্য প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন ডিজাইন ও ডেভেলপ করেন যিনি তার নাম সাতোশি নাকামোতো। 'যিনি' কথাটা এখানে সম্ভবত ঠিক নয়, কেননা সাতোশি নাকামতোর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। এটা হতে পারো কোন ব্যাক্তি, গোষ্ঠি, প্রতিষ্ঠার বা কোম্পানির কোডনেম।

এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিকই ছিলো। এখন নিশ্চইয় ভাবছেন এই ব্লকচেইন আবার কি! তাহলে চলুন ব্লক চেইন নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

ব্লকচেইন কি?
মোটামুটি নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবী জুড়ে যত অর্থের বা সম্পদের লেনদেন হচ্ছে সেই লেনদেনের সকল এনক্রিপটেড তথ্য একসাথে নিয়ে একটা ব্লক বানানো হয়। সেই ব্লক দিয়ে ক্রমানুসারে সাজানো সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয় একটা ডিস্ট্রিবিউটেড এবং ডিসেন্ট্রালাইজড লেজারকেই মূলত ব্লকচেইন বলা হয়। কেমন যেন ঘোলাটে লাগছে সব কিছু, তাইনা! বিটকয়েন কে আমরা এখন অনেকেই চিনি। এখানে আমরা যে ব্লক চেইনের কথা বলছি তার একটা উদাহরণ হচ্ছে বিটকয়েন ব্লকচেইন। বিটকয়েন একটা ক্রিপ্টোকারেন্সি যা কোন একটা ব্লকচেইন ব্যবহার করে পরিচালিত হয়।

ব্যাংকের যাবতীয় লেনদেন রেকর্ড করার জন্য সকল শাখায় একটা বড় সাইজের খাতা থাকে। আর যে ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে, তাদের এই রেকর্ড থাকে ডেটাবেইজে। হয়তো, সেই পুরানো খাতাতেও থাকে। এই বড় সাইজের খাতাটাকে বলে লেজার। তো একটা ভ্যালিড ট্রানকেজশানের জন্য অবশ্যই ব্যাংকের লেজারে সেটার এন্ট্রি থাকতে হবে। ব্লকচেইন এরকম একটা লেজার, যেখানে পাশাপাশি একটার পর একটা এরকম অনেকগুলো ব্লক থাকে। প্রত্যেকটা ব্লকের ভিতর থাকে একটা সময়ে মাঝে সারা পৃথিবীতে যত ট্রানজেকশান হয়েছে সেটার সকল ডেটা। এই ডেটা ওপেন কিন্তু এনক্রিপ্টেড অর্থাৎ সবাই দেখতে পারবে এই ডেটা কিন্তু পড়তে গেলে প্রাইভেট কী লাগবে। অর্থাৎ আপনি যদি এখানে ট্রাঞ্জেকশান করে থাকেন তাহলে শুধুমাত্র আপনি এখান থেকে আপনার ট্রানজেকশনের সকল তথ্য সেটার প্রাইভেট কী ব্যাবহার করে পড়তে পারবেন, অন্য কেউই পারবেনা। তবে মানুষ যেটা দেখবে তা হল ট্রানজেকশনের পরিমাণ। তবে কার অর্থ কার কাছে গিয়েছে সেটা এভাবে জানা যাবেনা। কেননা শুধুমাত্র এড্রেস দিয়ে চলে যাবে টাকা। কোন পরিচয় থাকবেনা।

নিচের ছবিতে দেখা যাবে একটা ট্রানজেকশান দেখতে কেমন। ব্লকচেইনের প্রত্যেকটা ব্লক সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয়। একবার চেইনে একটা ব্লক যোগ হয়ে গেলে সেটাতে কোন প্রকারের পরিবর্তন অসম্ভব। ব্লকগুলো পাশাপাশি তাদের সৃষ্টির ক্রমানুসারে বসে। প্রত্যেকটা ব্লক তার আগে কোন ব্লক আছ সেটা জানে। এভাবে একটা ব্লকের সাথে আরেকটা কানেক্টেড। ব্লকচেইন ডিস্ট্রিবিউটেড এবং ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম, অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে বলতে গেলে একই ব্লকচেইনের সব ইউজার বা ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ ইউজারদের কাছে একেবারে কার্বন কপি আছে। কাজেই একটা বা শ-খানেক সার্ভার বা কম্পিউটার একসাথে নস্ট হয়ে গেলেও ব্লকচেইনের কিছুই হবেনা।

ক্রিপটোকারেন্সিঃ
আমাদের প্রচলিত মুদ্রার মত ক্রিপ্টোকারেন্সি ও এক প্রকার মুদ্রা বা বিনিময় মাধ্যম। অর্থাৎ প্রচলিত মুদ্রা যেমন, ডলার, পাউন্ড, টাকা ইত্যাদি দিয়ে যে কাজ করা যায়, ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়েও সেই একই কাজ করা যায়। ব্লকচেইন টেকনোলজির মাধ্যমে লেনদেনের জন্য এই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা হয়। এইরকম মুদ্রা অনেক আছে, যেমন বিটকয়েন, বিটক্যাশ, মোনেরো, লাইটকয়েন ইত্যাদি। আমাদের মুদ্রা যেমন, ডলার, পাউণ্ড, টাকা ইত্যাদির দাম বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে, এগুলোর ক্ষেত্রেও তাই, অর্থাৎ ক্রয়/বিক্রয় মূল্য ওঠানামা করে।


ক্রিপ্টোকারেন্সি
তো এতক্ষণে নিশ্চইয় বুঝতে পেরেছেন ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কি। চলুন এবার তাহলে ক্রিপ্টোকারেন্সির কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

ক্রিপ্টোকারেন্সি ( যেমন ধরুন, বিটকয়েন) একটি নেটওয়ার্কের মতো। প্রতিটি পিয়ারের সমস্ত লেনদেনের সম্পূর্ণ ইতিহাস এবং এইভাবে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্সের রেকর্ড আছে। যেমন একটি ট্রান্সজেকশন ফাইল বলছে, "শামছুল x পরিমাণ বিটকয়েন অ্যালিস্কে দেয়" এবং এটি শামছুল হকের ব্যাক্তিগর কী দ্বারা সাক্ষরিত। এটি মৌলিক পাবলিক কী ক্রিপ্টোগ্রাফি। স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে একটি লেনদেন পুরো নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি এক পিয়ার থেকে অন্য পিয়ারে পাঠানো হয়। এটি মৌলিক P2P প্রযুক্তি। নিচের ইনফোগ্রাফ থেকে ধারণা পাওয়া যাবে কিভাবে ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কাজ করে। ছবিটিতে ক্লিক করলে বড় আকারে দেখঅ যাবে।

Blockchain Infographic [www.pwc.com]
লেনদেনটি অতি দ্রুত সম্পন্ন হয়। তবে নির্দিষ্ট সময় পরে নিশ্চিত হয়। অনেকটা কোন একাউন্ট অ্যাকটিভ করার মাধ্যমে কনফার্ম করার মতো। এই কনফার্ম বা নিশ্চিতকরণ ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যতক্ষণ লেনদেন অনিশ্চিত হয় ততক্ষণ, এটি মুলতুবি আছে এবং জাল করা হতে পারে। যখন একটি লেনদেন নিশ্চিত করা হয়, এটি পুরোপুরিভাবে লেজারে সেট করা হয়। এটিকে আর সংশোধন করা যাবেনা, মুছে ফেলা যাবে না। অর্থাৎ লেজারের তথ্য আর আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। এই প্রসেসটিই মূলত ব্লকচেইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যা আগেই আলোচনা করা হয়েছে।
শুধুমাত্র মাইনাররা ট্রানজেকশন নিশ্চিত করতে পারবেন। মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সি নেটওয়ার্কে এটিই মাইনারদের কাজ। তারা ট্রানজেকশন গ্রহন করে, লেজারে জমা রাখার পর নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয়। যখনি মাইনার কর্তৃক ট্রানজেকশন নিশ্চিত করা হয়, তখনি সেটা অপরিবর্তনীয় ব্লকচেইনের অংশ হয়ে যায়। এই কাজের জন্য মাইনাররা ক্রিপ্টোকারেন্সির টোকেন (ফী বলা যায়) লাভ করে (যেমন: বিটকয়েন)। যেহেতু মাইনরদের কার্যকলাপ ক্রিপ্টোকুরেন্স-সিস্টেমের একক সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাই আমরা মাইনরদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।

প্রচলিত সকল মুদ্রার নিয়ন্ত্রক হল কোন দেশের সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি হোক বা আমেরিকার মত প্রাইভেট হোক, দেশের অর্থনীতি এবং আরও অন্যান্য কিছু বিষয় বিবেচনা করে নতুন কারেন্সি তৈরি করতে পারে। সোজা বাংলায় নতুন 'ব্যাংক নোট' ছাপতে দিতে পারে। অর্থাৎ সেটা নিয়ন্ত্রকেরা নিজেদের ইচ্ছামত করতে পারে, কার লাভ কার ক্ষতি সেটা নিয়ে তাদের মাথা না ঘামালেও তাদের চলে অনেকসময়। যেমন, আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকা ছাপা হওয়ার কারনে আমাদের মুদ্রাস্ফীতি আছে।

কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তৈরি হয়। এখানে নতুন কারেন্সি বা বিটকয়েন আসে প্রতি ১০ মিনিটে একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক পাজল সমাধান করার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। আর এই পাজল প্রতিযোগিতাই হয় মাইনারদের মাধ্যমে।

যারা এনক্রিপশান সম্পর্কে জানে, তাদের কাছে SHA256 এনক্রিপশান পরিচিত হওয়ার কথা। যারা পরিচিত না, এটুকু জানলেই হবে, যে কোন ডেটাকে SHA256 এ যদি এনক্রিপ্ট করা হয় তাহলে ওই ডেটার জন্য একটা হ্যাশ পাওয়া যায়। হ্যাশ হল বোঝার সুবিধার্থে, "000001beeca3785d515897041af0a7" এরকম কিছু একটা। এখন এই ডেটা থেকে যদি অতি সামান্য কোন কিছুও পরিবর্তন হয়, তাহলে একটি ভিন্ন হ্যাশ পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এভাবে এনক্রিপ্ট করলে নির্দিষ্ট একটা ডেটার জন্য হ্যাশ সর্বদা একই হবে, এবং সবার কম্পিউটারেই একই হবে।

এখন লক্ষ করি, উপরে যে হ্যাশটা আমি ব্যবহার করেছি ওখানে শুরুতে ৫টা জিরো আছে। এটা ইচ্ছাকৃত। এবং এটাই সেই ক্রিপটোগ্রাফিক পাজল যেটার কথা একটু আগে বলেছি। প্রতি মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে বিটকয়েনের ব্লকচেইনে অসংখ্য লেনদেন চলছে। ব্লকচেইনে নতুন একটা ব্লক যোগ হওয়ার পর থেকে আনুমানিক ১০ মিনিট ধরে পেন্ডিং ট্রানজেকশনের ডেটা বিটকয়েন সিস্টেমের সকল মাইনারদের কম্পিউটারে জমতে থাকে। তো কথা হচ্ছে মাইনার মানে আমরা নিজেরা এবং আমরা কম্পিউটার নিয়ে বসে আছি পাজল সমাধান করার জন্য।

এখন আমাদের বা মাইনারদের টার্গেট হল, যে ডেটা আমাদের কাছে এই মুহূর্তে আছে সেটা, আগের ব্লকের হ্যাশ এবং তার সাথে আরেকটা Random Number (এখানে একে Nonce = Number Used Once বলা হয়) মিলিয়ে উপরের মত শুরুতে ৫টা জিরো আছে এরকম প্যাটার্নের একটা হ্যাশ খুঁজে বের করা। এই ৫টা জিরো কেন? এটাকে বলা হয়, ডিফিকাল্টি লেভেল, অর্থাৎ শুরুতে কয়টা জিরো বসবে সেটা আসলে পাজলটা সমাধান করা কত কঠিন সেটা নির্দেশ করে।

এভাবে মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার মাইনার তাদের কম্পিউটারে সেই কাঙ্ক্ষিত হ্যাশ খুঁজে বের করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। এই প্রসেস আসলে কোন বিশেষ অ্যালগরিদম বা বুদ্ধি দিয়ে জেতা যাবেনা। একেবারে বাংলা পদ্ধতিতে একটার পর একটা Nonce বা এক্সপ্রেশন প্রয়োগ করে চেক করতে হবে সেই প্যাটার্নের হ্যাশ পাওয়া গেল কিনা।

এই প্রতিযোগিতায় যে মাইনার সবার আগে এই হ্যাশ খুঁজে বের করতে পারে যে জয়ী। হ্যাশ খুঁজে পাওয়া মানে হল, নতুন একটা ব্লকচেইনের জন্য নতুন একটা ব্লক তৈরি হওয়া। চমৎকার না? বাকি মাইনার যারা জিততে পারলোনা তাদের কাজ হল, বিজয়ী মাইনারের রেজাল্ট সঠিক কিনা সেটা ভেরিফাই করা। এভাবে সম্ভবত ৫১.৭% মাইনার ভেরিফাই করে দিলে তখন, নতুন ব্লকটা একটা পরীক্ষিত বা সঠিক ব্লক হিসাবে ব্লকচেইনে যোগ হয়ে যায়।

বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে তার একটা ভিজুয়াল আইডিয়া নিচের ভিডিও থেকে পাওয়া যেতে পারে।


বাংলায় ব্লকচেইন নিয়ে যত লিখা আছে তার মাঝে মিডিয়ামের ব্লকচেইন এ ভবিষ্যৎ! লিখাটি সবচেয়ে বেশি সহজ এবং ভালো বলে মনে হয়েছে আমার। সকল তথ্য খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অবশ্যপাঠ্য!

ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে অনেক আলোচনা করা হলো।ক্রিপ্টোকারেন্সির অনেক ধরণের প্রকারভেদ আছে।যদি বিটকয়েন অধিক ব্যবহৃত ক্রিপ্টোকারেন্সি।এছাড়াও অনেক ধরণের ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে।

অন্যদিকে ক্রিপ্টোকারেন্সির সিকিউরিটি নিয়েও অনেকের সন্দেহ থাকতে পারে। বাকী সব ক্রিপ্টোকারেন্সি, ক্রিপ্টোকারেন্সির নিরাপত্তা এবং ভবিষৎ নিয়ে আগামী পর্বে আলোচনা করা হবে। সবাইকে সেই পর্ব পড়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আজকে এখানেই শেষ করছি।একসময় অস্তিত্ব টের পাওয়া না গেলেও ধীরে ধীরে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ডিজিটাল কারেন্সি বিটকয়েন। নাম পরিচয় গোপন রেখে সরাসরি গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল এ মুদ্রার লেনদেন হয়। আর এ কারণেই একে বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। বিটকয়েন নামের এই ক্রিপ্টোকারেন্সিকে ভবিষ্যত প্রজন্মের মুদ্রা হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন প্রযুক্তিবিদরা। তবে মুদ্রা ব্যবস্থায় লেনদেনের এ গোপনীয়তা সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন, সাইবার ক্রাইমে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৭ সাল ছিল এই বিটকয়েনের উত্থানের বছর। এ বছরের শুরুর দিকে বিট কয়েনের দাম ছিল ১ হাজার ডলারের মতো। তারপর এর দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। বিশেষ করে গত নবেম্বর থেকে অস্বাভাবিক গতিতে বাড়তে থাকে এর দাম। বাড়তে বাড়তে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিটকয়েনের দাম ২০ হাজার ডলারের কাছাকাছি পৌঁছায়। চারদিকে হুলুস্থল পড়ে যায় এই ভার্চুয়াল মুদ্রা নিয়ে। দেশে দেশের অর্থনীতির নীতি নির্ধারকরাও নড়ে চড়ে বসেন। এক বছরে একটি ডিজিটাল মুদ্রার ১,৫৫০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধিতে সবাই হতবাক হয়ে যান। কয়েন বিশারদরা একে ‘ডিজিটাল গোল্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ফান্ড ম্যানেজাররা ছোটেন এই ডিজিটাল গোল্ডের পেছনে। কারণ শুরুর দিকে এক বিটকয়েনের মূল্য ছিল মাত্র ২৫ সেন্ট। ২৫ সেন্টের একটি ভার্চুয়াল মুদ্রার মূল্যমান মাত্র কয়েক বছরেই ২০ হাজার ডলারে পৌঁছাবে তা কেউ কোনদিন ভাবতেই পারেনি। ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে বিটকয়েনের অবস্থান শীর্ষে থাকলেও এরইমধ্যে বাজারে এসেছে ইথেরিয়াম, বিটকয়েন ক্যাশ, রিপল, ড্যাশ, লাইটকয়েন, মোনেরো, জিক্যাশ, ড্যাশ প্রভৃতি নামের অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সি। বর্তমানে সারাবিশ্বে সর্বমোট ১ হাজার ৩৭৫টি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। কিন্তু বিট কয়েনের মতো এত জনপ্রিয়তা আর কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি পায়নি। যদিও সব ডিজিটাল মুদ্রা নিয়েই সতর্ক বার্তা জারি হয়েছে। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে টাকা, ডলার, পাউন্ডের মতো ১৮০টি মুদ্রা চালু রয়েছে।

তবে এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোও সতর্ক হয়ে উঠেন। তারা বিটকয়েনে বিনিয়োগের ব্যাপারে সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। ডেনমার্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিটকয়েনকে এক ভয়াবহ জুয়া বলে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের প্রধান এন্ডরু বেইলিও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিংবা সরকার এ মুদ্রাকে অনুমোদন দেয়নি। তাই এর পেছনে বিনিয়োগ মোটেই নিরাপদ নয়।’ বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রকদের এই সতর্কতা অবশ্য কাজে দিয়েছে। ২২ ডিসেম্বর এসে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে বিটকয়েনের। ২০ হাজার ডলার থেকে ১১ হাজার ডলারে নেমে আসে এই ভার্চুয়াল মুদ্রাটির মূল্যমান। তবে দু’দিন বাদেই আবার ঘুরেও দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত বছরের শেষে এসে ১৫ হাজার ডলারের কোটায় অবস্থান করে।

যদিও মুদ্রাটির উৎস সম্পর্কে খুব কমই বোঝা যায় এবং ব্যবহারও খুবই সীমিত। তারপরও এই মুদ্রাটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে এত তোলপাড় অতীতে কোন মুদ্রার ক্ষেত্রে হয়নি। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বে এ বছর এই অদেখা মুদ্রা নিয়ে এতে মাতামাতি মুদ্রাটিকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এবং ইউরোপের দেশে দেশে এ মুদ্রা জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এশিয়ায় এখনও অবৈধ এ মুদ্রার লেনদেন। এশিয়ায় বিটকয়েন অবৈধ রাশিয়া, ভারতের, চীন, বাংলাদেশ, সুইডেন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ আরও বেশকিছু দেশে। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আর্থিক সংস্থার কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এবং গ্রাহকের পরিচয় গোপন রাখার সুযোগ থাকায় রয়েছে দরপতন এবং হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা। তাই পশ্চিমা বিশ্বে বিটকয়েন কেনা সহজ হলেও এশিয়ায় এ ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় গোপনে।

বিটকয়েন এমন একটি মুদ্রা যা চোখেও দেখা যায় না, আবার হাতেও ধরা যায় না। তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই লেনদেন হয় সরাসরি গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কাছে, শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে। এ কারণেই ভার্চুয়াল এ মুদ্রার নাম হয়েছে বিটকয়েন। নতুন ইলেক্ট্র্রনিক ক্যাশ ব্যবস্থায় এ মুদ্রার লেনদেন হয় কম্পিউটার এবং স্মার্টফোনের মাধ্যমে।

বিটকয়েন মুদ্রাব্যবস্থায় যুক্ত হতে হলে ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক ই-কারেন্সি লেনদেনের মাধ্যম কয়েনবেসে খুলতে হয় এ্যাকাউন্ট। এ্যাকাউন্ট খুলতে হলে সমাধান করতে হয় গাণিতিক কিছু সমস্যার। এ্যাকাউন্ট খোলার পর গ্রাহকের স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিলেই পরিচালনা করা যায় বিটকয়েন এ্যাকাউন্ট। ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ডে কয়েনবেসের মাধ্যমে লেনদেন করে বিটকয়েন কেনাবেচা করতে পারেন গ্রাহক। তাই তো ক্যাশলেস অর্থনীতির নতুন পথ প্রদর্শক এ মুদ্রাব্যবস্থাকে ভবিষ্যত প্রজন্মের মুদ্রা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন প্রযুক্তিবিদরা। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলেন, ‘দৃশ্যমান মুদ্রাব্যবস্থার চেয়ে ভার্চুয়াল মুদ্রাব্যবস্থা বেশ ভাল। এটার সঙ্গে অর্থ পাচার কিংবা সন্ত্রাসের কোন সম্পর্ক নেই। ভবিষ্যতে এটি বড় বিনিয়োগের মাধ্যমও হতে পারে।’

বিল গেটস কিংবা প্রযুক্তিবিদরা এই মুদ্রার স্বপক্ষে কথা বললেও, এই ডিজিটাল মুদ্রা থেকে এক শ’ হাত দূরে থাকতে বলছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজ, কিংবদন্তি ধনকুবের ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফে। তাদের কাছে বিটকয়েন নেহাতই মরিচিকা। এর থেকে মানুষকে সতর্ক করছেন বিভিন্ন দেশের আর্থিক নিয়ন্ত্রকরাও। তাদের মতে, মুনাফার লোভে এখানে সর্বস্বান্তও হতে পারেন কেউ। বিভিন্ন বেআইনী কাজে এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবারই। বেশ কয়েকটি দেশে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েছে বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ। টাকা হারিয়েছেন লগ্নিকারীরা। শুধু বিটকয়েন একা নয়। এমন বহু ডিজিটাল মুদ্রার ফাঁদ পাতা রয়েছে নেটের ভুবনে।

এত হুঁশিয়ারি এত সতর্কবার্তার পরও থেমে নেই বিট কয়েনের দাপট। ইন্টারনেটে ঢুঁ মারলেই এখন বিটকয়েনের বিজ্ঞাপন। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার হাতছানি। হাজার টাকা ঢাললে নাকি এক বছরেই তা কয়েক কোটি। অথচ জিনিসটা আদপে কী, তা-ই সবার কাছে স্পষ্ট নয় এখনও। এ মুদ্রার ঠিকুজি অজানা। যে কোন দিন কিন্তু তা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে স্রেফ কর্পূরের মতো। মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা টেবিলে বসানো পুরনো কম্পিউটারে ইদানিং নেট খুলতেই চোখের সামনে চকচকে মুদ্রা। হালে আগাম লেনদেনে ১ বিটকয়েনের দাম ছাড়িয়েছিল ২০ হাজার ডলার এখন তা ১৫ হাজার ডলারের ধারে পাশে। রীতি মতো চোখ কপালে ওঠার মতো অঙ্ক? এক বছরে এই মুদ্রার দাম বেড়েছে ১৫শ’ ৫০ শতাংশ। চোখে-চিন্তায় ধাঁধা লেগে যাওয়ার মতোই বটে। আর হয়তো সেই কারণেই আছড়ে পড়তে শুরু করেছে বিজ্ঞাপন ‘এখানে টাকা রাখুন’।

অথচ এই মুদ্রার অনেক কিছুই এখনও স্পষ্ট নয়। ধোঁয়াশায় ভরা। এই কয়েন কোন দেশের নয়। কোন নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক নেই। অনেকটা হাওয়ার ভিতে অট্টালিকার মতো। বাস্তবে বিটকয়েনের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও ভার্চুয়াল দুনিয়ায় তার উপস্থিতি এই মুহূর্তে যথেষ্ট চর্চিত বিষয়।

বিটকয়েন কী : বিটকয়েন হলো অনলাইন লেনদেনে ব্যবহারের জন্য এক ধরনের মুদ্রা (ডিজিটাল কারেন্সি)। তা দিয়ে কেনাকাটা করা কিংবা টাকা মেটানো যাবে শুধু নেটেই। ১ টাকা মানে যেমন ১০০ পয়সা, তেমনই ১ বিটকয়েন মানে ১,০০০ মিলি-বিটকয়েন। আর ১ মিলি-বিটকয়েন= ১,০০,০০০ শাতোশি।

এই মুদ্রার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ, এতে লেনদেনকারীর পরিচয় গোপন থাকে। তার বদলে ব্যবহার হয় সঙ্কেতলিপি। অর্থাৎ, অন্য ডিজিটাল লেনদেনে যেমন বলা যায় যে, তা কার কাছ থেকে কার কাছে গেছে, বিটকয়েনের ক্ষেত্রে তা বলা যায় না। শুধু জানা যায় এক এ্যাকাউন্ট থেকে অন্যটিতে তার লেনদেন হয়েছে। তবে যদি এক্সচেঞ্জের লেনদেন (ট্রেডিং) করতে চান অথবা বিটকয়েন ভাঙিয়ে টাকা হাতে নিতে চান, তা হলে পরিচয় গোপন রাখা শক্ত। এটা ব্যবহার করা যায় মোবাইল, ট্যাবলেট ও কম্পিউটার মারফত। শুধু ইন্টারনেট থাকলেই হলো। বিশ্বেও বেশ কিছু নামী সংস্থা এবং ওয়েবসাইট বিটকয়েনের মাধ্যমে টাকা নেয়। দু’জনের হাতে এই মুদ্রা থাকলে, লেনদেন করা যায় নিজেদের মধ্যেও।

কারিগর কে : এই মুদ্রার কারিগর হলেন শাতোশি নাকামোতো। ২০০৮ সালে তিনিই প্রথম তৈরি করেন এই মুদ্রার সফটওয়্যার। কিন্তু তিনি কি একজন মানুষ? নাকি একটি গোষ্ঠী? তিনি কোন দেশেরÑ এসব প্রশ্নের উত্তর গত আট বছর ধরে জানা যায়নি। অনেকের দাবি, নাকামোতোর জন্ম ১৯৭৫ সালের ৫ এপ্রিল। তিনি জাপানের মানুষ। আবার অনেকে মনে করেন, নাকামোতো কোন একজন ব্যক্তি নন। বরং মার্কিন মুলুক এবং ইউরোপের অনেকে মিলে তৈরি করেছেন বিটকয়েন। এতেই বুঝা যায়, এর উৎস কতখানি অচেনা।

বিটকয়েন কেনাবেচা কী ভাবে : চাইলে বিটকয়েন কেনা যায় এক্সচেঞ্জ অথবা কোন ব্যক্তির কাছ থেকে। বিক্রিও হয় সেভাবেই। সাধারণত কেনার চেয়ে বিক্রি করা কঠিন। কারণ, যে কোন এক্সচেঞ্জ থেকে বিটকয়েন কেনা যতটা সহজ, বিক্রি ততটা নয়। এই মুদ্রা বিক্রি করতে হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক্সচেঞ্জে জমা দিতে হয় কেওয়াইসি, ব্যাংক এ্যাকাউন্টের তথ্য ইত্যাদি। তাতেও হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর আলাদা করে কাউকে বিক্রিও কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

তবে বিটকয়েন লেনদেন করতে চাইলে বা ক্রয় করতে চাইলে এর জন্য প্রথমেই খুলতে হয় বিটকয়েন ওয়ালেট। যে কেউই তা খুলতে পারেন। এই ওয়ালেটে বিটকয়েন জমা থাকে। যা রাখা যায় অনলাইনে। কম্পিউটারে এবং নেট মাধ্যমে তৈরি ‘ভল্ট’ বা লকারে। লেনদেন করতে চাইলে ওই জমা বিটকয়েনই পাঠাতে হয়। কিন্তু এক বার বিটকয়েন চুরি গেলে, কোন পুলিশের ক্ষমতা নেই খুঁজে আনার।

টাকার ক্ষেত্রে পাস বই দেখে বা নেট ব্যাংকিং করে বলা যায় যে আমার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে কিংবা তা থেকে কী লেনদেন করেছি। কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। বরং তার বদলে থাকে কত কয়েন ছিল আর কত আছে। ধরুন ‘ক’ ‘খ’-কে ১ বিটকয়েন পাঠাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে লেনদেন শেষ হলে ‘ক’ ব্যক্তির এ্যাকাউন্টে দেখাবে ১ বিটকয়েন কমেছে। আর ‘খ’-এর তা বেড়েছে। তা দেখেই বোঝা যাবে হাতবদল হয়েছে বিটকয়েন। তবে এ্যাকাউন্ট জানা গেলেও, এ ক্ষেত্রে লেনদেনকারীর পরিচয় জানা যায় না।

ঝুঁকি কোথায় : ঝুঁকিটা হলো সব দেশের মুদ্রারই নিয়ন্ত্রক রয়েছে (যেমন আমাদের দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক)। বিটকয়েনের সে রকম কোন নিয়ন্ত্রক নেই। কোন দেশের সরকার বা শীর্ষ ব্যাংক দ্বারাও স্বীকৃত নয় এই মুদ্রা। এখানেই তার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। কারণ, ব্যাংক থেকে কারও টাকা মার গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে পারেন তিনি। শেয়ার বাজারে গোলমাল দেখার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। কিন্তু বিটকয়েন কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না। এবং তা স্বীকৃত না- হওয়ায়, কারও টাকা মার গেলে কারও কাছে যাওয়ার উপায় নেই। এক বার টাকা গেল, তা ফেরতের সম্ভাবনা প্রায় নেই।

অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রায় বেশি রিটার্নের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের থেকে টাকা তুলছে বলেও অভিযোগ আসছে। এ ধরনের সংস্থার দাবি, এটা ইনিশিয়াল কয়েন অফারিং (আইসিও)। অর্থাৎ, বাজারে শেয়ার নথিভুক্তির সময়ে যেমন তাতে টাকা ঢালা হয়, তেমনই এই মুদ্রা বাজারে আসার সময়ই কম দামে লগ্নি করা। সেখানেও কিন্তু একই সমস্যা। কারণ, যেখানে মুদ্রাটি স্বীকৃতই নয়, সেখানে আপনার টাকা মার গেলে অভিযোগ জানানোর জন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। উল্টো বেশি টাকা ঢেলে আয়কর বিভাগের প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।

বিটকয়েনের দাম বাড়ছে শুধুমাত্র এর যোগান কম বলে। এর কোন আর্থিক ভিত্তি নেই। অর্থাৎ, কোন সংস্থার শেয়ারে টাকা রাখা হলে তার ব্যবসার ধরন, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, আর্থিক হিসাব ইত্যাদি দেখা হয়। কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে সে রকম কিছুই নেই। তাই চাহিদা কমে গেলেই, তার দাম পড়বে। মার খাবেন লগ্নিকারীরা।

শুরু কবে : বিটকয়েনের নাম প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০০৮ সালে শাতোশি নাকামোতোর লেখা একটি প্রবন্ধে। এরপর ২০০৯ সালে চালু হয় বিটকয়েন লেনদেন। তবে শুধুমাত্র বন্ধুদের মধ্যে ব্যবহারের জন্য (পিয়ার টু পিয়ার)। ২০১০ সালে প্রথম আনুষ্ঠান
Title: Re: ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং এর ইতিহাস
Post by: joy73 on September 08, 2018, 06:20:50 PM
ক্রিপ্টোকান্সি সম্পকে এত ভালো পোষ্ট করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমনি  বাংলাদেশের মানুষের জন্য ভালো ভালো পোষ্ট করছেন ও করেন । পরবর্তীতে আরো ভালো ভালো পোষ্ট করে আপনি আমাদের সাথে থাকবেন আশা করি।

ধন্যবাদ আপনাকে
Title: Re: ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং এর ইতিহাস
Post by: sornaakter01 on September 09, 2018, 11:34:20 AM
আমি মনে করি এধরনের ভালো ভালো পোষ্ট আমাদের বাংলাদেশী মানুষদের জন্য দরকার। এসব পোষ্ট আমাদের ক্রেপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে আরো ভালো অভিজ্ঞতা অজন করতে সাহায্য করবে।
Title: Re: ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং এর ইতিহাস
Post by: skemon on September 11, 2018, 03:10:31 PM
ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এক প্রকার ডিজিটাল মুদ্রা যার মাধ্যমে অনলাইনে লেনদেন করা হয়। অনলাইনে হাজার হাজার ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে যাদের মূল্য এক একটার এক এক মূল্য। যেমন বিটকয়েন সবচেয়ে ভালো মুদ্রা এর সর্বোচ্চ মূল্য ছিল 19000 হাজার ডলার । আর বিটকয়েন হলো সকল কয়েনের রাজা।
Title: Re: ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং এর ইতিহাস
Post by: totol02 on September 12, 2018, 06:31:13 AM
ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এক প্রকার ইলেক্টনিক ডিজিটাল মুদ্রা । এটি মানুষ ইন্টারটের মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয় করে থাকে। এখন যে কোন লেনদেন যেমন : গাড়ি, বাড়ি, পন্য সামগ্রী ইত্যাদি ক্রয় করার জন্য ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে হয়ে থাকে। এরক একটি ক্রিপ্টো হলো বিটকয়েন । বিটকয়েন সম্পর্কে আমরা সকলে জানি। সকল কয়েনের রাাজা হলো বিটকয়েন । শাতোশি নাকামোতো নামে একজন ব্যক্তিই এটি আবিষ্কার করেন।
Title: Re: ক্রিপ্টোকারেন্সি কি এবং এর ইতিহাস
Post by: Cinno3 on March 17, 2022, 08:11:06 AM
ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা। যার অস্তিত্ব শুধু ইন্টারনেট জগতেই রয়েছে। এই মুদ্রাটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে। এবং এই মুদ্রা ব্যবহার করে শুধু অনলাইনে লেনদেন করা সম্ভব। ক্রিপ্টোকারেন্সি মুদ্রা গ্রাহক টু গ্রাহকের কাছে লেনদেন হয়ে থাকে। এখানে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব থাকে না। তাই এই ডিজিটাল মুদ্রা কে কার সাথে লেনদেন করেছে তা তৃতীয় ব্যক্তি কোন কিছু জানতে পারবে না।