বিটকয়েন নিয়ে জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তার অনলাইনে যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারকারীদের অনেকের কাছেই বিটকয়েন একটি পরিচিত প্রত্যয়। আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগে এর যাত্রা। যদিও শুরু থেকেই এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নেতিবাচক নানা ধারণা ও সন্দেহ ছিল। তবে সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গ্রহণযোগ্যতা পেতে যাচ্ছে অনলাইনভিত্তিক এ মুদ্রাব্যবস্থা।
ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য বিখ্যাত আমেরিকান কোম্পানি ‘টেসলা’ এরই মধ্যে এ মুদ্রাব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে লেনদেনের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের বিটকয়েন কিনে নিয়েছে।
এদিকে উবার ও মাস্টারকার্ড বলছে, তারাও বিটকয়েনে লেনদের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পুরনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মেলন ঘোষণা করেছে, এ লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল অ্যাসেটস’ নামে একটি ইউনিট গঠন করেছে তারা। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিটকয়েন গ্রহণের উদ্যোগ এবং বিশ্বব্যাপী এর পরিচিতির কারণে অচিরেই একটি বিকল্প মুদ্রাব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাই আপনি যদি মনে করে থাকেন এ মুদ্রাব্যবস্থা সম্পর্কে আপনার জানা থাকা ভালো কিংবা বর্তমান প্রযুক্তির জ্ঞাননির্ভর বিশ্বে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করতে চান, তবে তা জানার এখনই সময়।
বিটকয়েন কী?
বিটকয়েন হলো একটি গোপন মুদ্রাব্যবস্থা। জাপানি বংশোদ্ভূত সাতোশি নাকামোতো নামে এক ব্যক্তির হাত ধরে ২০০৯ সালে এর যাত্রা হয়। এর লেনদেন হয়ে থাকে ‘পিয়ার টু পিয়ার’ বা গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কাছে। কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হয়। কোনো ধরনের দালাল বা মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয় না। বেনামে লেনদেনের কারণে সংরক্ষিত থাকে ব্যক্তির পরিচয়। এটাকে এক ধরনের সাংকেতিক মুদ্রাও বলা হয়।
সবচেয়ে মজার বিষয়টি হলো বিটকয়েন একটি ডিজিটাল মুদ্রাব্যবস্থা হওয়ায় এর কোনো বাহ্যিক ব্যবহার নেই। অর্থাৎ এটা ধরা-ছোঁয়া যায় না। এটির বিকেন্দ্রিক পদ্ধতির কারণে কোনো ব্যাংক বা সরকার এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
বর্তমানে ‘ওভারস্টক.কম’ থেকে ‘পেপাল’ পর্যন্ত সবক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। দিন দিন বিটকয়েন ব্যবহারের ক্ষেত্রের তালিকা আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে।
একটি বড় অংশের মানুষ বিটকয়েনকে বিনিয়োগের একটি ভালো মাধ্যম হিসেবে দেখছে। এটি নিশ্চিতভাবেই সত্য বলে প্রমাণ হয় এ কারণে যে চলতি সপ্তাহে বিটকয়েন সব সময়ের রেকর্ড ভেঙে ৪৯ হাজার মার্কিন ডলারে মাইলফলক ছুঁয়েছে।
কোথা থেকে কিনবেন?
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, বিটকয়েন শতভাগ ডিজিটাল। এর মার্কেটপ্লেস ‘বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ’ নামে পরিচিত। যেখানে প্রচলিত মুদ্রার বিনিময়ে বিটকয়েন বেচাকেনা করা যায়। এর মধ্যে কয়েনবেইজ হলো শীর্ষ মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে কয়েনমামা, সিইএক্স.আইও এবং জেমিনি।
কোথায় রাখবেন আপনার বিটকয়েন?
সাধারণ টাকা-পয়সা আমরা মানিব্যাগ বা ওয়ালেটে রাখি। টাকার পরিমাণ বেশি হলে আমরা ব্যাংকমুখী হই। কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে তথা কোনো বাহ্যিক অবয়ব না থাকায় বিটকয়েন রাখতে হয় ডিজিটাল ওয়ালেটে। ক্লাউড কিংবা কম্পিউটারের মতো ডিজিটাল ওয়ালেটে তা সংরক্ষণ করতে হয়। এটি ভার্চুয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতোই একটি ব্যবস্থা। কিন্তু ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো এর ওপর রাষ্ট্রের তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে চাইলে কোনো দেশ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিটকয়েন ব্যবস্থা চালুর অনুমতি নাও দিতে পারে। বাংলাদেশে বিটকয়েন মুদ্রার বৈধতা এখনো দেয়া হয়নি।
বিটকয়েন কতটা নিরাপদ?
ক্রিপ্টো কারেন্সি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল একটি মুদ্রাব্যবস্থা। শেয়ারবাজারের মতোই এর মূল্য প্রায়ই ওঠানামা করে। সেজন্য লাভের পাশাপাশি এতে লোকসানের ঝুঁকিও রয়েছে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করা যাক। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিটকয়েনের মূল্য বেড়ে ৪২ হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছে, তার পর আবার সেটির মূল্য নেমে আসে ৩০ হাজার ডলারে। এর পরই তা আবার বেড়ে ৪০ হাজার ডলারে এসে পৌঁছায়। এক সপ্তাহের মধ্যেই বিটকয়েনের মূল্যের এ উত্থান-পতন হয়।
এছাড়া ডিজিটাল মুদ্রাব্যবস্থায় আরো কিছু সহজাত ঝুঁকি রয়েছে। এ ব্যবস্থায় সার্ভার হ্যাক হওয়া, ফাইল ডিলিট হয়ে যাওয়া কিংবা পাসওয়ার্ড হারানোর অর্থই হলো চিরতরে ফান্ড হারিয়ে ফেলা। মূলত এসব কারণে পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক বিটকয়েনকে ‘অনিরাপদ’ বলে থাকেন এর সমালোচকরা।
সোর্স লিংক